মাহরাম কি? – যে সকল পুরুষের সামনে নারীর দেখা দেওয়া,কথা বলা জায়েজ এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন সম্পূর্ণ হারাম তাদের কে শরীয়তের পরিভাষায় মাহরাম বলে| . মাহরাম কারা? -সূরা আন নূরের ৩১ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নারীর মাহরাম নির্ধারিত করে দিয়েছেন| পূর্ণ আয়াত টি হল – “আর মুমিন নারীদেরকে বলে দিন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই-এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজেদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আন-নূর:৩১) …………বস্তুত পর্দার গুরুত্ব বুঝার জন্য এই একটি আয়াত ই যথেষ্ট! এই আয়াতে আল্লাহ পাক নির্ধারন করে দিয়েছেন – ১. দৃষ্টি নত রাখতে হবে, ২. সম্ভ্রমের হেফাযত করতে হবে, ৩. পর পুরুষের সামনে সৌন্দর্য প্রদর্শন করা যাবেনা, ৪. ওড়নার সঠিক ব্যবহার, ৫. নারীর মাহরাম অর্থাৎ নারী শুধুমাত্র কার কার সামনে যেতে পারবে, ৬. শারীরিক গঠন যাতে বুঝা না যায় তার জন্য নারীরা সজোরে হাঁটবেনা,ধীর গতিতে-ছোট পদক্ষেপে হাঁটবে, ৭. ভুল বশতঃ কোন গুনাহ হয়ে গেলে তওবা করতে হবে| … গায়রে মাহরাম কি? – যে সকল পুরুষের সামনে যাওয়া নারীর জন্য শরীয়তে জায়েজ নয় এবং যাদের সাথে বিবাহ বন্ধন বৈধ তাদের কে গায়রে মাহরাম বলে| বস্তুতঃ গায়রে মাহরামের সামনে একান্ত অপারগ হয়ে যদি যাওয়াই লাগে তবে নারী পূর্ণ পর্দা করে সামনে যাবে| . গায়রে মাহরাম কারা? -মাহরাম বাদে সমস্ত বিশ্বে-মহাবিশ্ব ে যত পুরুষ আছে সব গায়রে মাহরাম! নিজ পরিবারে চাচাত/খালাত/মামাত/ফুপাত সব ভাই, নিজ দুলাভাই, দেবর, ভাসুর, (আপন,দাদা ও নানা শ্বশুর বাদে) সমস্ত চাচা-মামা-খালু- ফুপা শ্বশুর… নিজ খালু/ফুপা এরা সবাই গায়রে মাহরাম! তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করা আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতা করা! মাহরাম ছাড়া সকল পুরুষের সামনে পর্দা করতে হবে এবং হবেই… … এক নজরে মাহরাম পুরুষ – ১. স্বামী (দেখা দেওয়া,সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রেক্ষিতে মাহরাম) ২. পিতা, দাদা, নানা ও তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ। ৩. শ্বশুর, আপন দাদা ও নানা শ্বশুর এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ। ৪. আপন ছেলে, ছেলের ছেলে, মেয়ের ছেলে ও তাদের ঔরসজাত পুত্র সন্তান এবং আপন মেয়ের স্বামী। ৫. স্বামীর অন্য স্ত্রীর গর্ভজাত পুত্র। ৬. আপন ভাই,সৎ ভাই ৭. ভাতিজা অর্থাৎ, আপন ভাইয়ের ছেলে এবং সৎ ভাইয়ের ছেলে। ৮. ভাগ্নে অর্থাৎ, আপন বোনের ছেলে এবং সৎ বোনের ছেলে। ৯. এমন বালক যার মাঝে মহিলাদের প্রতি কোন আকর্ষণ নেই। (সূরা নূর-৩১) ১০. দুধ সম্পর্কীয় পিতা, দাদা, নানা, চাচা, মামা এবং তাদের উর্ধ্বতন পুরুষগণ। ১১. দুধ ভাই, দুধ ভাইয়ের ছেলে, দুধ বোনের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। ১২. দুধ সম্পর্কীয় ছেলে, তার ছেলে, দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের ছেলে এবং তাদের ঔরসজাত যে কোন পুত্র সন্তান। এবং দুধ সম্পর্কীয় মেয়ের স্বামী। (বুখারী শরীফ হাদীস নং ৫০৯৯, মুসলিম শরীফ হাদীস নং ১১৪৪) ১৩. আপন চাচা, সৎ চাচা। ১৪. আপন মামা,সৎ মামা। (সূরা নিসা-২৩) ……………উপরোক্ত পুরুষ যাদের সাথে দেখা করতে বা দেখা দিতে পারবে তারা ছাড়া অন্য সমস্ত পুরুষ কে দেখা দেওয়া সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং হারাম। আর উপরোক্ত পুরুষের সাথে বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম| .. পর্দা কি? পর্দার পারিভাষিক সংজ্ঞা হল – ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়,অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে নারী-পুরুষ উভয়েরই তাদের নিজ নিজ রূপ-লাবণ্য ও সৌন্দর্যকে একে অপর থেকে আড়ালে রাখার জন্য ইসলামে যে বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তাকে হিজাব বা পর্দা বলা হয়। (আল মু‘জামুল ওয়াসীত, ১ম খ-, ১৫৬ পৃষ্ঠা) . ইবনে জাওযীর থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমদ (র.) বলেছেন, নারীদের প্রকাশ্য সৌন্দর্য হল কাপড় আর নারীদের শরীরের সবকিছু এমনকি নখও পর্দার অর্ন্তভুক্ত। (যাদুল মাসীর ৬/৩১) ………এ থেকে সহজেই অনুমেয় আমাদের পর্দা কেমন হওয়া উচিৎ! .. “আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩) ……এই আয়াতে প্রমাণ হয় রাসূল (সাঃ) স্ত্রীগণ ও গায়রে মাহরাম থেকে পর্দা করতেন! . আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত, “আমি যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আমাকে দেখে চিনে ফেলল। কেননা সে আমাকে হিজাবেব হুকুম হওয়ার আগে দেখেছিল। তখন সে ইন্নালিল্লাহ বলে উঠল, আমি তার ইন্নালিল্লাহ বলার শব্দে আমি জেগে উঠি তখন আমি ওড়না দিয়ে আমার মুখ ঢেকে ফেলি।” (সহীহ বুখারী ৫/৩২০,সহীহ মুসলিম হাদিস ২৭৭০,জামে তিরমিযী হাদিস ৩১৭৯) …..…এই হাদিস টিও অকাট্য দলিল! . উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি এবং মাইমুনা (রাঃ) রাসূল (সাঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম, এ সময় অন্ধ সাহাবী ইবনে উম্মে মাখতুম (রাঃ) সেখানে আসতে লাগলেন, তখন রাসূল (সাঃ) বললেন তোমরা পর্দা করো,আড়ালে চলে যাও, আমি বললাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! তিনি তো অন্ধ,আমাদের দেখতে পাচ্ছেন না, তখন রাসূল (সাঃ) বললেন তোমরাও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না? -(আবু দাউদঃ২/৫৬৮) . দুনিয়ায় থাকা কালেই যিনি জান্নাতের সর্দারনী হওয়ার সুসংবাদ পেয়েছিলেন সেই খাতুনে জান্নাত মা ফাতিমা (রাঃ) এর পর্দার কঠোরতা দেখে অবাক না হয়ে পারা যায়না!! মৃত্যুর পূর্বেই তিনি বলে গেছেন – “আমাকে যেন রাতের আঁধারে দাফন করা হয়,কারন আমি চাইনা দিনের আলোতে আমার শরীরের দৈর্ঘ-প্রস্থ কেউ দেখুক!” .. হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, আমি আমার সে ঘরে প্রবেশ করতাম যেখানে রাসূল (সাঃ) শুয়ে আছেন, তখন আমি আমার বড় চাদর খুলে রাখতাম আর ভাবতাম ইনি হলেন আমার স্বামী আর অপরজন আমার পিতা| পরে যখন হযরত উমর (রাঃ) কে এই ঘরে দাফন করা হল, আল্লাহর কসম আমি কখনো পুরো শরীর কাপড়ে না ঢেকে সেখানে প্রবেশ করিনি উমর (রাঃ) কে লজ্জা করার করনে| -(মুসনাদে আহমাদ,মিশকাতঃ১৬৭৪) ………মৃত ব্যক্তির সাথেও যেখানে এত কঠোর পর্দা সুতরাং আমাদের পর্দা কেমন হওয়া উচিৎ তা না বুঝার কথা নয়! … নারী পর্দার সাথে বাইরে বের হলেও সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা জরুরী| আর দূরে সফরের ক্ষেত্রে এটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে হাদিসে মাহরাম পুরুষ ছাড়া নারী কে বের হতেই নিষেধ করা হয়েছে! ………আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “মহান আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি যে নারী ঈমান রাখে,তার মাহরামের সঙ্গ ছাড়া একাকিনী এক দিন ও এক রাতের দূরত্ব সফর করা বৈধ নয়|” (বুখারীঃ১০৮৮,মুসলিমঃ১৩৩৯, তিরমিযীঃ১০৭০, আবু দাউদঃ১৭২৩,ইবনে মাজাঃ২৮৯৯) …. আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাকে,আমার বোন কে সহ সকল বোনদের কে পূর্ণ পর্দা করার তওফিক দান করুন এবং গায়রে মাহরামের ফিতনা থেকে হেফাযত করুন… ____ সংগ্রহ