#প্রশ্ন:১ – জানাযার নামাজ পড়ার নিয়ম কি ?
উত্তর – জানাযার নিয়ম এই যে,
🔘প্রথমে তাকবির বলে ইমাম সাহেব আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পড়ে সূরা-ফাতিহা পড়বে। সূরা ফাতিহার সাথে সূরায়ে ইখলাস বা সূরায়ে ‘আসরের ন্যায় কোরআনের কোন ছোট সূরা বা কিছু আয়াত মিলিয়ে নেয়া মুস্তাহাব। সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এভাবে সূরা মিলিয়ে জানাযা পড়তেন।
🔘অতঃপর দ্বিতীয় তাকবির দিয়ে রাসূলের উপর দরুদ পড়বে, যেমন অন্যান্য নামাযের শেষ বৈঠকে পড়া হয়।
🔘অতঃপর তৃতীয় তাকবির দিয়ে মৃতের জন্যে দু’আ করবে,
🔘 অতঃপর চতুর্থ তাকবির বলবে এবং ক্ষণকাল চুপ থেকে ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে জানাযা শেষ করবে। ( ২ দিকে সালাম ফিরালেও সমস্যা নেই)
#প্রশ্ন ২- যে ব্যক্তি জানাযা ও দাফনে অংশগ্রহণ করবে সে কি দু’কিরাত নেকি পাবে?
উত্তর – হ্যাঁ, সে দু’কিরাত নেকি পাবে।
“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জানাযায় অংশগ্রণ করত নামাজ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে এক কিরাত নেকি পাবে, আর যে জানাযায় অংশগ্রহণ করে দাফন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে সে দু’কিরাত নেকি পাবে”।জিজ্ঞসা করা হল, হে আল্লাহর রাসূল! দু’কিরাত বলতে কি বুঝায়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ “দুইটি বড় পাহাড় সমপরিমাণ”। (বুখারি ও মুসলিম)
#প্রশ্ন ৩- জানাযায় অংশগ্রহণকারীর যদি আংশিক সালাত ছুটে যায় তাহলে তা আদায় করতে হবে কি?
উত্তর – হ্যাঁ, ছুটে যাওয়া অংশ সাথে সাথে আদায় করে নিবে। যদি ইমামকে তৃতীয় তাকবীরে পায় তাহলে সে তাকবির বলে সূরা ফাতিহা পড়বে, ইমাম যখন চতুর্থ তাকবীর বলবে তখন সে দ্বিতীয় তাকবীর বলে রাসূলের উপর দরুদ পড়বে, ইমাম যখন সালাম ফিরাবে তখন সে তৃতীয় তাকবীর বলে দু’আ পড়বে অতঃপর চতুর্থ তাকবির দিয়ে সালাম ফিরাবে।
#প্রশ্ন :৪ – জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ার হুকুম কি?
উত্তর – জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবেই সালাত আদায় কর”। (বুখারি)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ“ঐ ব্যক্তির কোন সালাত হয়নি, যে সূরা ফাতিহা পাঠ করে নি”। (বুখারি ও মুসলিম)
ইবনু আব্বাস রাঃ হতে বর্ণিত,রসূল ছাঃ জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়েছেন।(ছহীহ তিরমিযী ১০২৬)
ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আওফ রাঃ বলেন,আমি একদা ইবনু আব্বাস রাঃ এর পিছনে জানাযার সালাত আদায় করলাম।তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করেন।অতঃপর তিনি বলেন,তারা যেন জানতে পারে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত।(ছহীহ বুখারী ১৩৩৫)
ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আওফ রাঃ বলেন,আমি একদা ইবনু আব্বাস রাঃ এর পিছনে জানাযার ছালাত আদায় করলাম।তাতে তিনি সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করলেন।তিনি ক্বিরআত জোড়ে পড়ে আমাদের শুনালেন।তিনি যখন ছালাত শেষ করলেন তখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম।তিনি বললেন,এটা সুন্নাত এবং হক্ব।(নাসাঈ ১৯৮৭)
অথচ সানা পড়ার স্পষ্ট কোন দলিল নেই তবুও আমরা সুরা ফাতিহা বাদ দিয়ে সানা পড়ে থাকি যা সহিহ হাদিসের সরাসরি বিরুধিতা
#প্রশ্ন:৫- জানাযায় অধিক সংখ্যক লোকের অংশ গ্রহণে কি বিশেষ কোন ফজিলত আছে?
উত্তর – সাহাবি আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
“যদি কোন মুসলিম মৃত্যুবরণ করে, আর তার জানাযায় চল্লিশ জন লোক এমন উপস্থিত হয়, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে শরিক করে না, আল্লাহ মৃত ব্যক্তির ব্যাপারে তাদের সুপারিশ কবুল করবেন”। (মুসলিম)
তাই আলেমগণ বলেছেন, যে মসজিদে মুসল্লি বেশী হয়, জানাযার জন্য ঐ মসজিদ অন্বেষণ করা মুস্তাহাব, মুসল্লি যত বেশী হবে ততই মৃতের জন্যে কল্যাণ হবে, কারণ এতে সে অধিক মানুষের দু’আ পাবে।
#প্রশ্ন ৬ : জানাযার ছালাত আদায়ের পর দলবদ্ধভাবে হাত তুলে দো‘আ করা এবং দাফন করার পর পুনরায় হাত তুলে দো‘আ করা কী শরী‘আত সম্মত?
উত্তর : জানাযা হ’ল মুসলিম মাইয়েতের জন্য একমাত্র দো‘আর অনুষ্ঠান। এর বাইরে সবকিছু বিদ‘আত। প্রশ্নে বর্ণিত উভয়টিই বিদ‘আতী প্রথা। বিশেষ করে জানাযার ছালাত আদায়ের পর হাত তুলে সম্মিলিত দো‘আ করার নিয়মটি সম্প্রতি চালু হয়েছে। উক্ত প্রথার প্রমাণে কোন দলীল নেই। তবে দাফনের পর সকলে ব্যক্তিগতভাবে মাইয়েতের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে।
এ সময় ‘আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়া ছাবিবতহু’ বলতে পারে (আবুদাঊদ হা/৩২২১)।
এছাড়া আল্লাহুম্মাগফিরলাহু ওয়ার হামহু.. মর্মে বর্ণিত দো‘আটিও পড়তে পারে (মুসলিম হা/৩৩৬)।
#প্রশ্ন ৭- জানাযার সালাতে ৩য় তাকবিরের পর কোন দুয়াটি করবে?
*মৃত ব্যক্তির জন্য দো‘আ*
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ، وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقِّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَاراً خَيْراً مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلاً خَيْراً مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجَاً خَيْراً مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ القَبْرِ [وَعَذَابِ النَّارِ]
*হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তাকে দয়া করুন, তাকে পূর্ণ নিরাপত্তায় রাখুন, তাকে মাফ করে দিন, তার মেহমানদারীকে মর্যাদাপূর্ণ করুন, তার প্রবেশস্থান কবরকে প্রশস্ত করে দিন। আর আপনি তাকে ধৌত করুন পানি, বরফ ও শিলা দিয়ে, আপনি তাকে গুনাহ থেকে এমনভাবে পরিষ্কার করুন যেমন সাদা কাপড়কে ময়লা থেকে পরিষ্কার করেছেন। আর তাকে তার ঘরের পরিবর্তে উত্তম ঘর, তার পরিবারের বদলে উত্তম পরিবার ও তার জোড়ের (স্ত্রী/স্বামীর) চেয়ে উত্তম জোড় প্রদান করুন। আর আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং তাকে কবরের আযাব [ও জাহান্নামের আযাব] থেকে রক্ষা করুন।*
আল্লা-হুম্মাগফির লাহু, ওয়ারহামহু, ওয়া ‘আ-ফিহি, ওয়া‘ফু ‘আনহু, ওয়া আকরিম নুযুলাহু, ওয়াওয়াসসি‘ মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমা-য়ি ওয়াস্সালজি ওয়ালবারাদি, ওয়ানাক্বক্বিহি মিনাল খাতা-ইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদদানাস
Filed under: Uncategorized | Leave a comment »