👉#সত্য বললে গীবত হবেনা! যারা এমনটা ভাবেন লিখাটা তাদের জন্য……..
- ‘থাক আর বলিস না! গীবত হয়ে যাচ্ছে!’
- ‘আরে না, গীবত না। আমি কি মিথ্যা কিছু বলতেসি? সত্যি যা, তাই বলতেসি।’
.
ভাই!
সত্য বলেই তা গীবত। মিথ্যে হলে তো দ্বিগুণ গুনাহ –
১. গীবত, ২. অপবাদ।
আসুন কিছু প্রশ্নোত্তরে জেনে নিই বিস্তারিত……
🔰গীবত (পরচর্চা) ও তহমত (অপবাদ)
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: গীবত করা তো আপন মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করার সমান। তাহলে ধরুন, কেউ কারোর নামে সমালোচনা করছে কিন্তু সেটা সত্য। অর্থাৎ যার নামে সমালোচনা করা হচ্ছে সত্যই তার মধ্যে সমস্যা আছে। তাহলেও কি গীবত বলে গণ্য হবে? কারণ তার নামে সত্যি কথাটাই বলা হচ্ছে; মিথ্যা বলা হয় নি।
উত্তর:
কারো মধ্যে যদি বাস্তবেই কোন দোষ-ত্রুটি থাকে আর তা যদি তার অসাক্ষাতে সমালোচনা করা হয় তাহলে এটাই প্রকৃত গীবত (পরচর্চা)। এটাই মৃত ভায়ের গোস্ত খাওয়ার সমতুল্য এবং কবিরা গুনাহ। কিন্তু যদি তার মধ্যে কোন দোষ না থাকে তারপরও অন্যায়ভাবে তার দোষ চর্চা করা হয় তাহলে এটাকে তহমত বা অপবাদ বলা হয়। গীবতের চেয়ে অপবাদ দেয়া আরও বড় অন্যায়। কারণ, এতে এক সাথে অনেকগুলো অন্যায় সংঘটিত হয়। যেমন, অপবাদ, মিথ্যা, সম্মানহানি ও জুলুম।
গীবত (পরচর্চা) ও তহমত (অপবাদ) এর সংজ্ঞা সম্পর্কে নিম্নোক্ত হাদিসটি পড়ুন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম বলেছেন: তোমরা কি জান, গীবত কি? তাঁরা বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন:
“গীবত হল তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে।”
#প্রশ্ন করা হল: আমি যা বলেছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন?
তিনি বললেন: “তুমি তার সম্পর্কে যা বলেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-২৫৮৯)
🔰গীবত এর সংজ্ঞা, ভয়াবহতা এবং যে সব ক্ষেত্রে গীবত বৈধ
▪▪▪▪▪▪▪▪
প্রশ্ন: গীবত সম্পর্কে একটু বিস্তারিত জানতে চাই। কেউ যদি আমার মনে কষ্ট দেয় তার সে আচরণের কথা যদি আমি ৩য় কাউকে বলি তবে কি এটা গীবত হবে-এই হিসেবে যে এ কথা তার সামনে বললে সে মনে কষ্ট পেত?
উওরঃ গীবত এর সঙ্গা, ভয়াবহতা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে গীবত করা বৈধ?
গীবতএরসংজ্ঞাঃ
গীবত শব্দটির আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, অনুপস্থিত কারো, পরচর্চা করা, পরনিন্দা করা, কুৎসা রটনা করা, পিছে সমালোচনা করা ইত্যাদি।
◼ পরিভাষায় গীবত বলা হয় ‘তোমার কোনও ভাইয়ের পেছনে তার এমন দোষের কথা উল্লেখ করা যা সে গোপন রেখেছে অথবা যার উল্লেখ সে অপছন্দ করে।’ (মু’জামুল ওয়াসিত)
◼ গীবতের সবচেয়ে উত্তম ও বাস্তবসম্মত সংজ্ঞা দিয়েছেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিম্নোক্ত হাদিসে :
সাহাবি আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, গীবত কাকে বলে, তোমরা জান কি? সাহাবিগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -ই ভালো জানেন। তিনি বললেন, তোমার কোনও ভাই (দ্বীনি) সম্পর্কে এমন কথা বলা, যা সে অপছন্দ করে, তা-ই গীবত। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যে দোষের কথা বলি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহলেও কি গীবত হবে? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের থাকে তবে তুমি অবশ্যই তার গীবত করলে আর তুমি যা বলছ তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছ। (মুসলিম)
সুতরাং এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়, কোনও ভাইয়ের এমন দোষের কথা বলা গীবত যা সে অপছন্দ করে।
অত:এব কেউ যদি আপনাকে কষ্ট দেয় আর আপনি তা যদি এমন ব্যক্তির সামনে পেশ করেন, যে তার বিচার করবে বা এ বিষয়ে দুজনের মধ্যে সমাধান করবে বা এ ব্যাপারে আপনাকে সাহায্য করবে তাহলে তা গীবতের পর্যায়ে পড়বে না। অন্যথায় গীবত হিসেবে পরিগণিত হবে।
🎯#গীবতের_ভয়াবহতা:
▪ গীবত বা অসাক্ষাতে মানুষের দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ সূরা হুজরাতের ১২ নম্বর আয়াতে বলেন,
وَلَا يَغْتَبْ بَعْضُكُمْ بَعْضًا أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَنْ يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ
‘আর তোমরা কেউ কারো গীবত করো না, তোমরা কি কেউ আপন মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? একে তোমরা অবশ্যই ঘৃণা করবে।, (সূরা হুজুরাত:১২)
সুস্থ, স্বাধীন কোনও বিবেকবান মানুষই জ্ঞান অবশিষ্ট থাকা পর্যন্ত মৃত মানুষ তো দূরের কথা, যে পশু জীবিত থাকলে হালাল সেই পশু মৃত হলে তার গোশতও ভক্ষণ করবে না। অথচ মানুষ সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে গীবতের মতো জঘন্য ফেতনায় নিমজ্জিত হয়।
▪ গীবত সামাজিক বন্ধন ছিন্নভিন্ন করে দেয়। মানুষের মাঝ থেকে ভালবাসা, বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক নষ্ট হয়। শুরু হয় মানুষে মানুষে অবিশ্বাস, আস্থাহীনতা এবং সকল ক্ষেত্রে চরম বিশৃংখলা। এটি একটি সামাজিক ক্যান্সারের মত। সমাজ দেহে কোন এক স্থানে এর সূচনা হলে আস্তে আস্তে তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমানে আমাদের সমাজে এহেন বিশৃংখ অবস্থা বিরজমান হওয়ার জন্য এই অপরাধটি অন্যতম কারণ।
তাই গীবতের ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা জরুরি।
যেসকলক্ষেত্রেঅসাক্ষাতেকোরওদোষত্রুটিআলোচনাকরাগীবতেরঅন্তর্ভুক্ত_নয়:
ইমাম নববী (রহ:) বলেন, ”সৎ ও শরীয়ত সম্মত উদ্দেশ্য সাধন যদি গীবত ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে এক্ষেত্রে গীবত জায়েয।” তার মতে ছয় ধরণের গীবত জায়েয। যথা:⤵️⤵️
☑ ১. মজলুম ব্যক্তি জালেমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারে।
☑ ২. ত্রুটি সংশোধনের জন্য কোন ব্যক্তির দোষ এমন ব্যক্তির কাছে বলা, যে তা সংশোধন করার ক্ষমতা রাখে।
☑ ৩. মুফতির নিকট মাসয়ালা জানতে গিয়ে প্রয়োজনে কোন ব্যক্তির (সম্ভব হলে নাম উল্লেখ না করে) ত্রুটি বলা যায়।
☑ ৪. কোন ব্যক্তি কারো সাথে বিয়ে বা ব্যবসায়ের সম্পর্ক করতে চাইলে এবং তার সম্পর্কে অন্য ব্যক্তির সাথে পরামর্শ চাইলে তার দোষ-গুণ স্পষ্টভাবে বলে দেবে যা সে জানে (মনে হিংসা-বিদ্বেষ না রেখে)।
☑ ৫. যে সব লোক সমাজে প্রকাশ্যে পাপ কাজ, বিদআত বা গোমরাহির প্রসার ঘটাচ্ছে, তাদের দোষ-ত্রুটির তীব্র সমালোচনা জায়েয।
☑ ৬. চেনার উদ্দেশ্যে কাউকে ছদ্মনাম বা খারাপ উপনামে ডাকা জায়েয (তাকে হেয় করার উদ্দেশ্যে নয়)।
(আল্লামা ইমাম নববী রচিত মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ)
▪▪▪▪▪▪▪
উত্তরদাতা:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীলল
জুবাইল, দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
“গীবত এমন একটি কবিরা গুনাহ; ছালাত, সাদক্বা, সিয়াম ও হজ্ব যা মার্জনা করতে পারে না।”
(ইবনু উসাইমীন,শারহু রিয়াদুস সালিহীন, ৬/১০৯)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে গীবত-পরচর্চা, মিথ্যারোপ, অপবাদ ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক অন্যায় থেকে হেফাজত করুন। আমিন,,,,,,,
Filed under: Uncategorized | Leave a comment »