‘ বিদআত ও বিআতের পরিণতিঃ
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ وَيَغْفِرْ لَـكُمْ
ذُنُوْبَكُمْ ۗ وَاللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
(হেব নবী) “বলে দাও, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তবে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহসকল ক্ষমা করবেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।”
(Ali ‘Imran 3: Verse 31)
ۗ وَمَاۤ اٰتٰٮكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهٰٮكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا
” রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর,যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাক।
(Al-Hashr 59: Verse 7)
اَطِيْعُوا اللّٰهَ وَالرَّسُوْلَ
‘তোমরা আল্লাহর ও রসূলের আজ্ঞাবহ হও’।
(Ali ‘Imran 3: Verse 32,132)
An-Nisa 4:13,59,69,80)
(Al-Mai’da 5:92)
(Al-Anfal 8:1,20,24,46)
(At-Tawba 9:71)
(An-Nur 24:1,20,24,46)
(Al-Ahzab 33:31,33)
(Muhammad 47:33)
(Al-Fath 48:17)
(Al-Hujurat 49:14)
(Al-Mijadilah 58:13)
(At-Taghabun 64:12)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فَمَاذَا بَعۡدَ ٱلۡحَقِّ إِلَّا ٱلضَّلَٰلُۖ ﴾ [يونس: ٣٢]
অর্থাৎ “সত্যের পর ভ্রষ্টতা ছাড়া আর কী আছে?” (সূরা ইউনুস ৩২ আয়াত)
তিনি আরো বলেন,
﴿ مَّا فَرَّطۡنَا فِي ٱلۡكِتَٰبِ مِن شَيۡءٖۚ ﴾ [الانعام: ٣٨]
অর্থাৎ “আমি কিতাবে কোন কিছু লিপিবদ্ধ করতে ত্রুটি করিনি।” (সূরা আনআম ৩৮ আয়াত)
﴿ وَأَنَّ هَٰذَا صِرَٰطِي مُسۡتَقِيمٗا فَٱتَّبِعُوهُۖ وَلَا تَتَّبِعُواْ ٱلسُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمۡ عَن سَبِيلِهِۦۚ﴾ [الانعام: ١٥٣]
অর্থাৎ “নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।” (সূরা আনআম ১৫৩ আয়াত)
আল্লাহ আরও বলেছেনঃ
ۚ فَاِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ اِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ
“যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটে, তাহলে সেই বিষয়কে আল্লাহ এবং রসূলের (নির্দেশের) দিকে ফিরিয়ে দাও।
( An-Nisa’ 4: Verse 59)
هَاتُوا بُرْهٰنَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صٰدِقِينَ,
Produce your proof, if you should be truthful.”
তোমাদের প্রমাণ পেশ কর,যদি তুমরা সত্যবাদী হও।
( Al-Baqara: Verse 111)
جَآءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبٰطِلُ ۚ إِنَّ الْبٰطِلَ كَانَ زَهُوقًا
“সত্য এসেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে,নিশ্চয় মিথ্যা বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল”
( Al-Israa 17: Verse 81)
يٰۤاَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُقَدِّمُوْا بَيْنَ يَدَيِ اللّٰهِ وَرَسُوْلِهٖ وَ اتَّقُوا اللّٰهَ ۗ اِنَّ اللّٰهَ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ
“ওহে মু’মিনগণ! তোমরা (কোন বিষয়েই) আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আগে বেড়ে যেয়ো না, আল্লাহকে ভয় কর, আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।”
(Al-Hujurat 49: Verse 1)
وَ مِنْهُمْ اُمِّيُّوْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ الْكِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِيَّ وَاِنْ هُمْ اِلَّا يَظُنُّوْنَ
“তাদের মাঝে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে, যাদের মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া কিতাবের কোন জ্ঞানই নেই, তারা কেবল অলীক ধারণা পোষণ করে।”
(Al-Baqarah 2: Verse 78)
রসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি ইসলামে এমন কিছু নতুন সৃষ্টি করল যা তার মধ্যে নেই তা বাতিল।”
বুখারী হা/২৬৯৭
মুসলিম হা/১৭১৮,
রসূল (রাঃ) আরো বলেছেন: “আর তোমরা দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা থেকে সাবধান থেকো ! নিশ্চয় ইসলামে প্রত্যেক নতুন বিষয় বিদআ’ত। প্রত্যেক বিদআ’তই ভ্রষ্টতা। প্রত্যেক পথভ্রষ্টই জাহান্নামে থাকবে।”
মুসলিম- হা/১৫৩৫
নাসাঈ হা/১৫৬০
রসূল (রাঃ) আরো বলেছেনঃ
দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু উদ্ভাবন সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট কাজ। প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা।
ইবনু মাজাহ হা/৪৫
মুসলিম হা/৮৬৭,
নাসাঈ হা/১৫৭৮, ১৯৬২;
আবু দাঊদ হা/২৯৫৪,
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে কোনো নতুন কিছু উদ্ভাবন করল—যা তার মধ্যে নেই, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে, ‘‘যে ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করল, যাতে আমাদের নির্দেশ নেই, তা বর্জনীয়।’’[1]
সহীহুল বুখারী ২৬৯৭,
মুসলিম ১৭১৮,
আবূ দাউদ ৪৬০৬,
ইবনু মাজাহ ১৪,
আহমাদ ২৩৯২৯,
রাসূল সা ইরশাদ করেছেনঃ
নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম রীতি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রীতি। আর নিকৃষ্টতম কাজ (দ্বীনে) নব আবিষ্কৃত কর্মসমূহ এবং প্রত্যেক বিদ‘আত ভ্রষ্টতা।’’
মুসলিম ৮৬৭,
নাসায়ী ১৫৭৮,
আবূ দাউদ ২৯৫৪, ২৯৫৬,
ইবনু মাজাহ ৪৫, ২৪১৬,
আহমাদ ১৩৭৪৪, ১৩২৪,
রাসূল (সা) আরও বলেন,
তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদ্বীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবূত করে ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমূহ (বিদ‘আত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা
আবূ দাউদ ৪৬০৭,
দারেমী ৯৫,
রিয়াযুস স্বালিহীন ১৭৫
বিদআতের সংজ্ঞাঃ
বিদআত শব্দের অভিধানিক অর্থঃ
*পূর্ববর্তী কোন নমুনা ছাড়াই নতুন আবিষ্কৃত বিষয়।
আন-নিহায়াহ,পৃ ৬৯,
কাওয়াযেদ মা’রিফাতিল বিদ’আহ, পৃঃ১৭
*আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে নতুন করে যার প্রচলন করা হয়েছে এবং এর পক্ষে শরিয়তের কোন ব্যাপক ও সাধারণ কিংবা খাস ও সুনির্দিষ্ট দলীল নেই।
কাওয়াযেদ মা’রিফাতিল বিদ’আহ, পৃঃ২৪
ইমাম ইবনুল যাওজী রহ বলেন,
বিদআত বলতে বুঝায় এমন কাজকে যা ছিলনা অতঃপর উদ্ভাবন করা হয়েছে।
তালবীসু ইবলীস, পৃঃ ১৬
হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু বলেন,
যে সকল ইবাদত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম এর সাহাবাগণ করেন নি তোমরা সে সকল ইবাদাত কর না।
সহীহ বুখারী
মালিক ইবনে আনাস রহ. বলেন এই উম্মাতের প্রথম প্রজন্ম যে আমল দ্বারা সংশোধিত হয়েছিল একমাত্র সেই আমল দ্বারাই উম্মাতের শেষ প্রজন্ম সংশোদিত হতে পারে।
ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকিম ২/৭১৮
ইমাম ইবনু তাইমিয়া রহ. কিছু বিদআতের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বলেন,
এ কথা জানা যে,যদি একাজটি শরীয়তসম্মত ও মুস্তাহাব হত যদদ্বারা আল্লাহ সাওয়াব দিয়ে থাকেন,তাহলে নবী করিম (সা) এ ব্যাপারে সবচেয় বেশি অবহিত থাকতেন এবং অবশ্যই তাঁর সাহাবীদেরকে তা জানাতেন,আর তাঁর সাহাবীরাও সে বিষয়ে অন্যদের চেয়েও বেশি অবহিত থাকতেন এবং পরবর্তী লোকদের চেয়েও এ আমলে বেশী আগ্রহী হতেন।কিন্তু যখন তারা এ প্রকার আমলের দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলেন না তাতে বোঝা গেল যে,তা নব উদ্ভাবিত এমন বিদআত যাকে তারা ইবাদাত,নৈকট্য ও আনুগত্য হিসাবে বিবেচনা করতেন না।অতএব এখন যারা একে ইবাদাত,নৈকট্য,সাওয়াবের কাজ ও আনুগত্য হিসাবে প্রদর্শন করছে তারা সাহাবাদের পথ ভিন্ন অন্য পথ অনুসরন করছেন এবং দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু প্রচলন করছেন যার অনুমতি আল্লাহ প্রদান করেননি।
ইকতিযা আস-সিরাত আল মুস্তাকিম ২/৭৯৮
তিনি আরো বলেন,
আর যে ধরনের ইবাদত পালন থেকে নবী করীম (সা) বিরত থেকেছেন অথচ শরীয়ত সম্মত হত তাহলে তাহলে তিনি নিজে অবশ্যই পালন করতেন, অথবা অনুমতি প্রদান করতেন এবং তাঁর পরে খলীফাগণ ও সাহাবীগন তা পালন করতেন।অতএব এ কথা নিশ্চিত ভাবে বিশ্বাস করা ওয়াজিব যে একাজটি বিদআত ও ভ্রষ্টতা।
মাযমু আল ফাতাওয়া -১৬/১৭২
এর দ্বারা বুঝা গেলযে যে সকল ইবাদাত পালন করা থেকে রাসূল (সা) নিজে এবং তাঁর পরে উম্মাতের প্রথম প্রজন্মের আলিমগন বিরত থেকেছেন নিঃসন্দেহে সেগুলো বিদআত ও ভ্রষ্টতা।পরবর্তী যুগে কিংবা আমাদের যুগে এসে এগুলোকে ইবাদাত হিসেবে গণ্য করার কোন শরয়ী’ ভিত্তি নেই।
ইমাম যাহাবী বলেন,
জন্ম উৎসব, নববর্ষ উৎসব পালনের মাধ্যমে অমুসলিমদের অনুকরণ নিকৃষ্ট বিদআত।
আত-তামাসসুক-বিসসুনান পৃঃ ১৩০
প্রচলিত কিছু বিদআত –
১.মুখে উচ্চারন করে প্রতেক নামাজের জন্য নিয়ত করা।(নিয়ত করা ফরজ,মুখে উচ্চারন করে নিয়ত করা বিদআত)
২.ওজুর আগে মুখে উচ্চারন করে নিয়ত করা।
৩.ওযু করার সময় ঘাড় মাসাহ করা।
৪.রোজার নিয়ত মুখে উচ্চারন করে পাঠ করা।
৫.ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করা।
৬.নামাজের শেষে সালাম ফিরানোর পর সবাইকে নিয়ে একসাতে মুনাজাত করা।
৭,শবেবরাত রাতে ১০০রাকআত সালাত বিশেষ পদ্ধতিতে আদায় করা।
৮.পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমা ছাড়া অন্যান্য সালাতের জন্য আজান দেওয়া।
৯.বিপদ-আপদ ও ঝড়-তুফান আসলে ঘরে আজান দেওয়া।
১০.আল্লাহর কাছে সাওয়াব ও বরকত লাভের প্রতাশায় অথবা,যে কোন কাজে আল্লাহর সাহায্য লাভের উদ্দেশ্য মিলাদ পড়া।
১১.কাফিরদের উৎসব ও পর্ব অনুষ্টানের অনুকরণে উৎসব ও পর্ব পালন করা।
১২.অমুসলিমদের সাথে খাস যে সকল প্রথা ও ইবাদত রয়েছে মুসলিমদের মধ্যে সেগুলো অনুসরণ করা।
রাসূল (সাঃ) আনীত দ্বীন একটি পূর্নাঙ্গ দ্বীনঃ
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْـكِتٰبَ تِبْيَانًا لِّـكُلِّ شَيْءٍ وَّ هُدًى وَّرَحْمَةً وَّبُشْرٰى لِلْمُسْلِمِيْنَ
আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি যা প্রত্যেকটি বিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা, সত্য পথের নির্দেশ, রহমাত আর আত্মসমর্পণকারীদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ।”
(An-Nahl 16: Verse 89)
اَ لْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَـكُمْ دِيْنَكُمْ وَاَ تْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَـكُمُ الْاِسْلَامَ دِيْنًا
“আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নিআমাত পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে কবূল করে নিলাম।
(Al-Ma’idah 5: Verse 3)
আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
রাসূল (সা) বাতাসে দুই ডানা মেলে উড়ন্ত পাখির বিষয়েও আমাদের শিক্ষা দিতে ছাড়েন নি।
আহমদ, হাদীস নং ২১৬৮৯,২১৭৭০,২১৭৭১
একজন মুশরিক সালমান ফারসী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেনঃ
তোমাদের নবী তোমাদেরকে সবকিছু শিখিয়েছেন,এমনকু পায়খানা পেশাবের নিয়ম পদ্ধতি। তিনি বললেন হ্যাঁ।রাসূল (সা) আমাদের পায়খানা ও পেশাবের সময় কিবলামূখ হওয়া,তিনটি কম পাথর দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা, ডান হাত দ্বারা পবিত্রতা হাসিল করা অথবা গোবর ও হাড় দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে নিষেদ করেছেন।
সহীহ মুসলিম, তাহারাত অধ্যায়,পরিচ্ছেদ -আল-ইস্তিবাহ,হাদীস নং ২৬৯
Filed under: Uncategorized | Leave a comment »